Reading Time: 4 minutes

প্রিয় নববর্ষ,

তুমি এসেছ বলে আমরা এবার কেউ আনন্দিত নই! বরং এক রাশ মন খারাপ এসেছো! পুরনো সব স্মৃতিদের মিছিল ভিড় করেছে শহরের দরজায়। কড়া নাড়ছে, আর বলছে এত দিন তো অপেক্ষা করেছ আজ কেন এত বেজার? আমি বা আমরা নিশ্চুপ! অবুঝ নববর্ষকে বোঝানোর শক্তি আমরা পাবো কোথায়? আমি কি করে বলব, দরজার ওপারে যখন মৃত্যু তখন আনন্দ করার বিলাসিতা জানালা দিয়ে পালায়। আচ্ছা, আনন্দিত হওয়ার কোন উপকরণটা আমার আছে ভেবেছ তুমি চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা নেই, নেই রমনা বটমূলের বহু গলায় গেয়ে উঠা, “এসো হে বৈশাখ এসো এসো”! নেই বন্ধুদের আনাগোনা নেই নিজেকে রাঙানোর ইচ্ছে। এত সাদামাটা একলা বৈশাখ আমি পাইনি কখনো! গত বারের ভ্যাপসা গরমে মাথা ফাটা রোদ উপেক্ষা করেও গোটা শহর সেজেছিল। মায়ের সাদা শাড়ি লাল পাড়ের গরদটা বেশ মানিয়েছিল রুমকিকে। এবারের তো কোন আয়োজনই করেনি রুমকি! 

আনন্দ কই আর! এ তো দেখি সব অভিমানেরা! থাক একলা আকাশ আমার একার ই থাক! 

ইতি
একা থাকা অভিমানী ঢাকা!  

এতক্ষণ যে চিঠিটা পড়ছিলেন এটা শহর ঢাকার এক টুকরো অভিমান! নববর্ষ প্রতিবার নিয়ে আসে নতুন আশার মিছিল, আমরা নতুন বছরে পা বাড়াই! এবারও কেন তার ব্যতিক্রম হবে? এই পরিবর্তনটাই আমরা নিতে নারাজ। তাই এই অভিমানী চিঠির জবাব দিয়েছে খোদ নববর্ষ। দেখুন সে কি বলতে চাইছে। নববর্ষ যদি জবাব দিতে পারত ঠিক এমনটাই জবাব আসত ঃ

প্রিয় ঢাকা এবং সমগ্র বাংলাদেশ,

আমি প্রতিবার তোমাদের কাছে আসি নতুন কিছু আশা আর আলো নিয়ে। এবারও তার ব্যাতিক্রম কিছু হবে না। আমি আজ বাদে কালই আসছি। কিন্তু, সময় আগের মত নেই! দুঃসময়ের ফোঁড়নে হানা দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯। এই মহামারি থেকে বাঁচতে আজ সকলে তোমারা ঠাই নিয়েছ ঘরের কোণে। এতেই নাকি রক্ষা সকলের। হ্যাঁ, আমি আসব শহর গ্রামের প্রতিটি মোড়ে, যেখানে আমার জন্য কেউ হয়তো আর অপেক্ষায় থাকবে না! এতে কি আমার কষ্ট হবে না? অবশ্যই হবে। ভাবো তো তোমরা, এই আমার জন্য প্রতিবার হয় কত শত আনন্দ আর আয়োজন সেই আমাকে ঘিরেই আজ তৈরি হয়েছে মন খারাপ হতাশা আর অভিমান। হোম কোরেন্টাইন এ যেখানে আমরা ঘরের ভেতরেই থাকছি সেখানে পহেলা বৈশাখ ১৪২৭ উদযাপন আসলেই বিলাসিতা। তাই বলে কি থেমে যাবে জীবনের সবকিছু? মোটেও না! বাড়িতে বসেও যদি অফিসের কাজ হতে পারে তাহলে কেন পহেলা বৈশাখ ১৪২৭  উদযাপন ঘরে বসে হবে না?  ভাবছো কিভাবে? আমি বলছি! নতুন বছরের সাথে নতুন করে বর্ষ বরণ করতে হবে। 

সকালটা শুরু হোক এভাবে 

সূর্যাস্ত
সকালের শুরু হোক এক সাথে!

রমনার “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” গানটা এবার না হয় টেলিভিশন কিংবা ইউটিউবে শুনে নিন। সকালটা কিন্তু একদম চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এই গান শুনতে শুনতে সকলে সকালের পান্তা ইলিশ কিংবা ঘরে যা ই আছে তা দিয়ে সকালের নাস্তাটা সেরে নিলেন। কতবার এমন হয়েছে কে কোথায় থেকেছেন এবার তো প্রিয়জনদের কাছে আছেন এই সুযোগটা কাজে লাগান। তাদের সাথে কাটিয়ে নিন কিছু সুন্দর মুহুর্ত। 

সকাল গড়িয়ে যখন দুপুর

চায়ের কাপ
দিনের যেকোন সময়ে এক কাপ চা হয়ে যাক পরিবারের সাথে!

ঘরটা আজ নাহয় আজ বাঙালিয়ানায় ভরিয়ে তুললেনঘরের সাজ নিয়ে ভাবতে গেলে আমরা কত শত ডেকোর আইডিয়া নিয়ে ভাবি। ইংরেজী ঘরানার আইডিয়াগুলো বরাবরই আমাদের অনুপ্রাণিত করে আসছে। কিন্তু, কোথাও কি আমরা পক্ষপাতিত্ব করছি না, বিদেশী ধাঁচের সাজের প্রতি? ঘরের সাজে সংস্কৃতির ছোঁয়া যারা আনতে চাই তাদের জন্য আজকের এই আয়োজন। তবে সবাই মিলে ঘর সাজান একা একা নয়! রান্নাবান্না করুন, আজকের দুপুরের রান্নাটা বিশেষ করা গেলে মন্দ নয় তবে আহামরি কিছু না করতে পারলেও মুশকিল নেই। ছোট পরিসরেও কিন্তু মজাদার রান্না সম্ভব। ঘরের ভেতর বৈশাখী আমেজ আনতে, কাগজের অরিগামি তৈরি করতে পারেন। রঙ তুলিতে রাঙিয়ে নিতে পারেন ঘরের কোন দেয়াল কিংবা ক্যানভাস। আর আল্পনার কথা ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু! সকলে মিলে যখন এই সবকিছু করবেন তখন কিন্তু সুন্দর একটি সময় এমনিতেই কেটে যাবে।   

দুপুর থেকে যখন রাত 

আলপনা
প্রদীপের আলোয় হয়ে উঠুক নতুন দিন উজ্জ্বল

ঘর সাজানো শেষ, মজার খাবার দাবার ও তৈরি। এবার তাহলে কী বাকী রইল? নিজেকে একটু সাজিয়ে তোলা! পরন্ত বিকেলটা উপভোগ করতে নিজেকে একটু বাঙালি ধাঁচে সাজিয়ে নিন। এক প্যাচে শাড়ি পরে, রবীন্দ্র নায়িকা সাজার এখনই সময়। সাধারণত এমন সাজের সুযোগ হয় না যেহেতু ঘরেই থাকবেন তাই এমন সাজ নেওয়াই যায়। সুন্দর করে সেজে ঘরের সবাই এক সাথে বেলকনিতে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। কিছু সুন্দর সময় কাটাতে পারেন। পাশের বাসার মানুষদের সাথে একটু আলাপ করা গেলে কিন্তু খারাপ হয় না! এরপর সবাই মিলে ছবি তুলে নিলেন, এই স্মৃতিটা ফ্রেমবন্দী করতে ভুলবেন না। যখন সবকিছু ঠিক হয়ে আসবে তখন এই মূহুর্তগুলো খারাপ সময়ের মধ্যে থাকার ভালো সময়গুলো সম্বন্ধে জানান দিবে। কাছে বা দূরের বন্ধু বা প্রিয়জনদের সাথে ভার্চুয়ালি গল্প করুন। সুন্দর সুন্দর সময় কাটান। বিকেলে মিউজিক প্লেয়ারে বাজাতে পারেন বাংলার সব সুন্দর গান। একটা উৎসব আমেজ কিন্তু ঘরের ভেতরেও সম্ভব। বিকেলটা আরও সুন্দর করতে সকলে মিলে গাইতে পারেন পছন্দের কোন গান। 

এটা সত্যি পহেলা বৈশাখ  যেভাবে আমরা উদযাপন করে থাকি চিরচেনা উপায়ে হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু এভাবেও পহেলা বৈশাখ ১৪২৭ আরও বেশি সুন্দর আর অর্থ বহ হয়ে উঠতে পারে যদি আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করি। ঢাকা আরও সুন্দর আরও বেশি সম্ভাবনা নিয়ে ফিরবে, ঠিক ততদিন নিজের ঘরে থাকি। নর্ববর্ষ কে বরণ করতে কিন্তু রাজপথে নামতে হবেই এমন কোনো কথা নেই! আমরা চাইলেই করতে পারি পহেলা বৈশাখ ১৪২৭ – উদযাপন, ঘর থেকে, ঘরে থেকে!

প্রিয় ঢাকা আমি আবারও আসব নতুন আর একটি বছর নিয়ে, কোন সুন্দর শহরে যেখানে অসুখেরা তাড়া করবে না! এমন অসময়ে সকলে একসাথে থেকো। 

ইতি,
নববর্ষ ১৪২৭!

প্রিয় ঢাকা যেখানে একা আছে তার জন্য আপনার কাছে কোন কথা থেকে থাকলে জানাতে ভুলবেন না! কমেন্ট করুন। 

1 Comment

Write A Comment