Reading Time: 3 minutes

সে সময়ের ঢাকা কিন্তু আজকের মত এমন জরাজীর্ণ ছিল না। আগের ঢাকা কেমন ছিল এর নাহয় শ’খানেক ছবি আপনি পেয়েই যাবেন। কিন্তু তখনকার সময়ের বাড়িগুলো কেমন ছিল? কখনও কি ভেবেছি আমরা? অনেকেই হয়তো ভেবেছি কিন্তু তেমন একটা উপসংহারে পৌঁছানো হয়নি। চলুন না, আজকে একটু পেছনের সময়ে ঘুরে ফিরে আসা যাক। খুব বেশি দূরের কথা বলছি না। এই ধরুন ৬০ দশকের সময় ঢাকার বাড়িগুলো কেমন ছিল? কী নকশায় তখনকার বাড়িগুলো তৈরি করা হতো? বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোকে দেওয়া হতো বেশি প্রাধান্য! কোন প্যাটার্নটা বেশি অনুসরণ করা হতো, কেমন রঙ ব্যবহার করত সবাই। এমন অনেক কিছুই আছে যা কিনা আমরা খেয়াল করিনি।  চলুন তো জেনে নেই, কেমন ছিল আগেকার সময়ের বাড়িগুলো !

 “বড় আঙিনা বা বারান্দা থাকতো, যেখানে কাটতো পরিবারের সাথে একান্ত কিছু সময়”

তখনকার সময়ে ঘর ছোট বড় যেমনই হোক না কেন বারান্দা বা খোলামেলা আঙ্গিনা অথবা বাগান থাকতো। জায়গা জমির বড় একটা অংশ জুরে থাকতো বাগান। সেই বাগানে থাকতো ফুল ফলের নানারকম গাছ! পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর একটা বড় অংশ কেটে থাকতো এই আঙ্গিনায়। সেই সময়ে পরিবার নিয়ে একই ছাদের নিচে সবাই মিলে থাকা হতো, এতে যেমন পারিবারিক সম্পর্ক আরও মজবুত হতো তেমনি স্মৃতির ঝুলিতে জমা পড়তে থাকে সুন্দর সব মুহূর্ত। সারাদিন সকলে যে যেখানেই সময় কাটাক না কেন দিনের একটা সময় তারা সকলে এক সাথে সময় কাটাতো। হয়তো চায়ের আড্ডা বা রাতের খাবার। বারান্দার প্যাটার্নগুলো বেশ বড় এবং খোলামেলা হতো, বারান্দাগুলোতে দেওয়া হতো না ছাদ। বারান্দার রেলিং, ছাদের রেলিং এর মতই দেখা যেতো। রডের পরিবর্তে ব্যবহার হতো ইট সিমেন্টের রেলিং। এখনকার সময়ের মত খাচার মত বন্দি বারান্দা ছিল না, ছিল আকাশের মত বিশাল বারান্দা। ঘরের পরিবেশ উৎফুল্লময় রাখতে পরিবারের সকলের উপস্থিতিই যথেষ্ট! 

“বড় করে এক বা দুটো ঘর থাকতো”

 অন্ধকার ঘরে টেবিল রাখা
সকলে মিলে থাকা হতো আনন্দে!

দুটো বা একটা ঘর থাকতো বেশ বড় পরিমাপের। যেখানে জড়সড় হয়ে থাকতো গোটা পরিবার। সে সময়ে একক পরিবারের তেমন একটা চল ছিল না, সবাই সপরিবারে এক ছাঁদের নিচে থাকতো। বিরাট বড় একটা ঘরে কম করে হলেও দুটো খাট এক সাথে রাখা থাকতো সকলে মিলে সেখানেই গুটিসুটি করে থাকা হতো। শোবার ঘরে যদি বাবা মা থাকতেন তাহলে পরের ঘরটায় থাকতেন, পরিবারের বৃদ্ধ এবং ছোট সদস্যরা। তখন পরিবার যেমন বড় ছিল, ঘরের সংখ্যাও ছিল কম। কিন্তু, আদর আর স্নেহের কোন কমতি ছিল না। যদিও এখনকার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণই ভিন্ন, একক পরিবার হলেও বাড়িতে ঘরের সংখ্যা অনেক সময় সদস্যের চেয়ে বেশি। সকলের জন্য থাকতো আলাদা আলাদা ঘর। এখন দুটো ঘরে সকলে মিলে থাকা কোনভাবেই সম্ভব নয়। সকলে আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত স্পেসে এতটাই কমফর্টেবল যে একটি ঘরে সবাই মিলে থাকা কিছুটা কঠিন হয়ে যাবে এখনের প্রেক্ষাপটে। 

“ইউ বা এল শেপের বাড়ি থাকত”

এখনকার সময়ে অ্যাপার্টমেন্টগুলোকে খেয়াল করলে কিছু প্যাটার্ন কিছু শেপই বেশি লক্ষ করা হয় সেটি হল, স্কয়ার শেপের অ্যাপার্টমেন্ট। ঘরের সংখ্যা যেমনই থাকুক না কেন অ্যাপার্টমেন্টটা স্কয়ার শেপের হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। কিন্তু, সে সময়ের কথা ছিল ভিন্ন। তখনকার সময়ে এল কিংবা ইউ শেপের বাড়ি হতো বেশি। বলা চলে পাশাপাশি থাকতো সব ঘরগুলো। হোক তা রান্নাঘর কিংবা শোবার ঘর সব কিছু এক লাইনেই থাকতো। আবার, কিছু কিছু থাকতো ইউ শেপের। মধ্যে থাকা উঠান বা সকলের বসার জায়গা ঘিরে চারিদিকে থাকতো পরিবারের সকলের থাকার ঘরগুলো। ঘরগুলোর সামনে থাকতো কখনো বারান্দা আবার কখনো থাকতো উঠান। এই উঠান থাকার প্যাটার্নটা ছিল বেশ কমন। দিনের প্রায় বেশিরভাগ সময় এই উঠানে সকলে মিলে কাটানো হতো। চায়ের আড্ডা হোক কিংবা রাতের খাবার সকলে করতেন এক সাথে, সময় কাটানো পরিবারের সাথে সত্যিই ঘরের সম্পর্কগুলোকে শক্তিশালী করে তোলে।  

“উঠা নামার জন্য সিঁড়ি থাকত”

চক্রাকার সিঁড়ি
সিঁড়িঘরের স্মৃতি মনে গেঁথে আছে সবার!

আগেকার সময়ে আধুনিকতা তেমন স্পর্শ করেনি দেখেই, বাড়ির ভেতরে কিংবা বাড়ির কোণায় থাকতো সিঁড়ি । আবাসিক ভবনগুলো খুব বেশি উচ্চতার থাকতো না। সর্বোচ্চ চার তালা পর্যন্ত করা হতো, রাখা হতো সিঁড়ি। ইট সিমেন্টের রেলিং গুলোতে রডের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। লিফট এর ব্যবহার নেই দেখেই উঠা নামার জন্য সিঁড়িই প্রধান পথ। কোন সিঁড়ি আকারে প্রশস্ত আবার কোনটা হয় একটু চাপা। তখনকার সময়ে আলোর খুব একটা ব্যবহার ছিল না, হালকা আলো আধারের ছায়ায় সিঁড়ি ঘরটা জমা করে অসংখ্য স্মৃতি। যারা এই দশকের সময়টাতে ছিলেন তারা হলফ করে বলতে পারবেন, কতটা সুন্দর সময় কেটেছিল।  

আগেকার সময়ের বাড়িগুলো দেখতে ভীষণ কারুকার্যময় ছিল। বাড়ির নকশায় ফুটে উঠতো মুগল সময়ের ছাপ। বাড়ির নকশায় থাকতো ফুল আর লতা পাতার কারুকাজ। দেয়ালগুলো ছিল বেশ উঁচু পরিসরের। রঙেও তেমন বৈচিত্র্য দেখা যেতো না, ইটা রঙ করা দেয়াল থাকতো বাড়িজুড়ে। গেটে থাকতো ফুলের গাছ। সমস্ত গেটজুরে নানা গাছ ছড়িয়ে থাকতো। পথের দু-ধারেও থাকতো নানাজাতের ফুলের টব। বাড়ির আঙ্গিনায় ফুল গাছের সাথে মেতে থাকতো পরিবারের সকলের ভালোবাসা।   

1 Comment

  1. Md.Siraj Hossain

    আমাকে ফোন নম্বর 01914080369 দেওয়া কেন

Write A Comment