বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট খাতটি দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে,এ বিষয়টি সুনিশ্চিত। এবং সেই সূত্র ধরে একথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, এই খাতটি খুব দ্রুতই তার আধিপত্য বিস্তার করবে।
তবে হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পরা করোনা মহামারী, গোটা বিশ্বের অর্থনীতির চাকা থামিয়ে দিয়েছে। এ মহামারী প্রায় এক বছর ধরে সারাবিশ্বে প্রায় জেঁকে বসে তার অস্তিত্বের জানান দিয়ে চলছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে, বাকি সব খাতগুলোর মতো বিশ্বের রিয়েল এস্টেট খাতটিও মুখোমুখি হচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জের। বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট খাতটিও সেই সীমাবদ্ধতার বাইরে বয়।
এদেশের প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে সব প্রয়োজন মিটিয়ে বাজেটের মধ্যে ঘর খুঁজে নেয়া সাধারণ বাসিন্দাদের জন্য সবসময়ই ছিল কষ্টসাধ্য। চাহিদামাফিক ঘর খুঁজতে না পারায় অসংখ্য অসুবিধার মধ্য দিয়ে জীবনযাপণ করাতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলেন অনেকে।
তবে করোনা মহামারীর আগে, এ সমস্ত অসুবিধা কাটিয়ে প্রপার্টি সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে উদ্যোগী হয় বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির উদ্যোগে আয়োজিত প্রপার্টি ফেয়ারগুলো। এই ফেয়ারগুলো প্রপার্টির ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষের জন্যই সহজ একটি মাধ্যম হয়ে ওঠে। ফলে, বিক্রেতার ক্ষেত্রে যেমন ক্রেতা খুঁজে পেতে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার অবসান ঘটে, ক্রেতার জন্যও সৃষ্টি হয় একসাথে অসংখ্য প্রপার্টির অপশন। ফলে কম সময়ে চাহিদামাফিক প্রপার্টি নির্বাচন করা সহজ ও কম সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে। প্রপার্টি ফেয়ারগুলো যখন এভাবেই আশা জাগানিয়া হয়ে চাহিদার সবটুকু পূরণ করতে সক্ষম হয়ে উঠেছে, ঠিক সেই সময় মাহামারীর এ আক্রোশে আরেকবার ধীর হতে চলে রিয়েল এস্টেট খাতের গতি। তবে বর্তমান সময়ে সেই গতিকে সচল রাখতে এবং শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে যে ভাবনাটি সবচেয়ে বড় ভুমিকা রেখেছে সেটি হচ্ছে অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার। আর সেই ভাবনা থেকেই বাংলাদেশের একমাত্র রিয়েল এস্টেট স্ল্যুশন প্রভাইডার বিপ্রপার্টি শুরু করেছে “বিপ্রপার্টি অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার।” দেশসেরা এই অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ারে থাকছে ১০ হাজারেরও বেশি এভেইলেবল প্রপার্টি এবং এক্সক্লুসিভ প্রজেক্ট। কিন্তু কী এই অনলাইন ফেয়ার, কিভাবে তা রিয়েল এস্টেট খাতের সমস্যাগুলোর সমাধানে ভূমিকা রাখবে? চলুন জেনে আসি আরেকটু কাছ থেকে।
প্রপার্টি ফেয়ারের চালচিত্র
সামগ্রিকভাবে মেলা হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেখানে বিভিন্নভাবে বিনোদন বা ব্যবসায়িক উদ্দেশে জনসমাগম ঘটে। মেলার মৌলিক বিষয়টি হল এটি অস্থায়ী। সাধারণভাবে, এক দিন বা কয়েক সপ্তাহের জন্য মেলা অনুষ্ঠিত হও। অন্যান্য মেলার মত প্রপার্টি মেলার ধারণাটিও একই রকম। দর্শনার্থীরা এখানে প্রপার্টির সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারেন এবং খুব সহজে প্রপার্টি ক্রয় বিক্রয় করতে পারেন। শুরু থেকেই প্রপার্টি মেলা একটি বড় ভূমিকা পালন করে চলেছে এবং রিয়েল এস্টেট খাতে বিশাল প্রভাব ফেলছে। এই মেলাগুলিতে অসংখ্য রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারস এবং স্বতন্ত্র বিক্রেতারা তাদের প্রপার্টি বিক্রয় করতে এক ছাদের নীচে একত্রিত হন। ফলে, একসাথে অসংখ্য ক্রেতার কাছে একচেটিয়া প্রপার্টি প্রদর্শনের সুযোগও সৃষ্টি হয়। বিপ্রপার্টি বছরের পর বছর ধরে এই ধরণের মেলার আয়োজন করে আসছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই, আস্থার সাথে প্রপার্টির লেনদেন করতে পারছেন। এর অন্যতম একটি উদাহরণ হল বিপ্রপার্টি রামপুরা মেলা। আর একটি বড় ইভেন্ট রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত বার্ষিক রিহ্যাব ফেয়ার।
অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ারঃ কী ও কেন
অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ারের সব থেকে চমকপ্রদ দিকটি হল এখানে সশরীরে যাবার প্রয়োজন নেই। সাধারণ প্রপার্টি মেলার সব আয়োজন, সব রকম সুবিধাদি এখানে অফার করা হয় অনলাইনে। অনলাইন প্রপার্টি মেলায় সাধারণ প্রপার্টি মেলার মতো রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারস, বিভিন্ন কোম্পানি এবং বিক্রেতাদের প্রপার্টি বা সার্ভিস প্রদর্শনের জন্য কোনো ফিজিক্যাল ভেন্যু থাকে না। এই একটি পার্থক্য বাদ দিলে অনলাইন প্রপার্টি মেলা সাধারন প্রপার্টি মেলার মতোই। অনলাইন প্রপার্টির মেলার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বিপ্রপার্টি অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার। যেখানে গ্রাহকদের জন্য ফিন্যান্সিয়াল কনসালটেন্সি থেকে শুরু করে লিগ্যাল এডভাইস পর্যন্ত প্রপার্টির সংক্রান্ত সবরকম সার্ভিস নিশ্চিত করা হয় বিনামূল্যে। এক্সক্লুসিভ প্রজেক্ট থেকে শুরু করে ১০ হাজারেরও বেশি এভেইলেবল প্রপার্টির কালেকশন নিয়ে আয়োজন করা হয় দেশসেরা এই অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার। এই ফেয়ারের আকর্ষণীয় অফার, লোভনীয় ইএমআই স্কিম, বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট সার্ভিস এবং অনলাইনেই প্রাইস নেগোসিয়েশন করার মতো সুবিধাগুলোই প্রমাণ করে, একটি অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার একজন সম্ভাব্য গ্রাহকের চাহিদাগুলো পূরণ করতে কতটা সক্ষম।
অনলাইনে অনেকগুলো ফিচারসমৃদ্ধ একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার হোস্ট করা হয়। ওয়েবসাইটের এই ফিচারগুলোতে এভেইলেবল সার্ভিস এবং ফিচারকে হাইলাইট করে আলাদা আলাদা সেকশন সংযুক্ত থাকে। সাধারণত অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ারগুলো আকর্ষণীয় এসব ফিচার সম্বলিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাজ করে। এর মধ্য দিয়ে একসাথে অসংখ্য অডিয়েন্স ফেয়ার ও ফেয়ারে চলমান অফারগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
অনলাইন ফেয়ারের সুবিধা
অনলাইন ফেয়ারগুলো প্রচলিত প্রপার্টি ফেয়ারের চাইতেও ফলপ্রসূ হতে পারে, বিশেষত এই করোনাকালীন সময়ে। যেহেতু অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতা এই সময়ে সশরীরে মেলায় গিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না, তাদের জন্য অনলাইন প্রপার্টি মেলা দারুণ সুসংবাদ। একটি অনলাইন ফেয়ার গ্রাহকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে যেসব কারণে-
- অনলাইন প্রপার্টি মেলা বেছে নেয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এতে যাতায়াতের ভোগান্তি নেই। ঘরে বসে নিশ্চিন্তে পছন্দের প্রপার্টি খুঁজে নিতে পারেন যে কোনো গ্রাহক।
- গ্রাহকদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয় না। দ্রুততম সময়ে ফোনের কয়েকটি ক্লিকেই প্রপার্টি ফেয়ার থেকে ঘুরে আসা যায়। ,
- এ ধরণের প্রপার্টিতে লোকেশন নিয়ে ভাবতে হয় না। অফিস থেকে শুরু করে কিচেন, যে কোনো রকম পরিস্থিতিতে মেলা ঘুরে দেখার সুবিধা থাকে।
- যেহেতু এ ধরণের ফেয়ারগুলোতে মেলা শুরু বা শেষ হবার কোনো সময় বেঁধে দেয়া থাকে না, ফলে দিনে-রাতে যে কোনো সময় মেলা ঘুরে আসার সুযোগ থাকে।
- এ ধরণের মেলায় টার্গেট অডিইয়েন্সের কাছে পৌঁছানো আরও সহজ হয়েছে। কোনো অডিয়েন্স পৃথিবীর অন্যপ্রান্তেও থাকলেও, মেলা ঘুরে দেখতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
- অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ারে রিয়েল-টাইম চ্যাটসহ অসংখ্য আকর্ষনীয় ফিচার সংযুক্ত থাকে। যেমন, বিপ্রপার্টি অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ারে “অফার বাটন” নামে একটি নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহক তার চাহিদামত প্রপার্টির মূল্য নিয়ে নেগোসিয়েশনের সুবিধা পাচ্ছেন।
- ভার্চুয়াল ইন্টারফেসের মাধ্যমে, একজন সম্ভাব্য ক্রেতা যে কোনো প্রপার্টি ৩৬০ ডিগ্রী ভিউতে আরও বিস্তারিতভাবে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।
এছাড়াও অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ারের অসংখ্য প্রযুক্তিগত সুবিধাও রয়েছে। যেমন, সমস্ত ডাটা ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে বলে, তা গ্রাহকের প্রপার্টির চাহিদা বুঝতে সহায়তা করে। ফলে ভবিষ্যতে এ ধরণের ইভেন্টগুলোতে গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা সহজ হয়।
ভবিষ্যতের রিয়েল এস্টেট খাতে ভূমিকা
চলমান পরিস্থিতিতে, অনলাইন শপিং থেকে শুরু করে অনলাইনভিত্তিক অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেড়ে চলেছে। এতদিন যারা অনলাইনে লেনদেনের বিষয়ে অনিচ্ছুক ছিলেন, এখন তাদের অনেকেই চিন্তাধারায় পরিবর্তন এনেছেন। ফলে অনলাইনে প্রপার্টির লেনদেনসহ অন্যান্য অনলাইনভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয়ে তারা আগ্রহী এবং অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। এটি রিয়েল এস্টেট জগতে আয়োজক এবং গ্রাহক উভয়ের জন্যই একটি দারুণ সুসংবাদ।
অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার বা ভার্চুয়াল ফেয়ার যেটাই বলা হোক না কেন, এটা এখন বাংলাদেশে প্রচলিত একটি ধারণা। ফিজিক্যাল কোনো অস্তিত্ব না থেকেও চমৎকারভাবে এটি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের সমস্যার সহজ সমাধানে পরিণত হয়েছে। যদিও বর্তমানে এটি করোনাকালীন সময়ের একটি বিকল্পমাত্র, তবে অদূর ভবিষ্যতে অনলাইন ফেয়ার প্রপার্টি ক্রয় বিক্রয়ের অবিচ্ছেদ্য একটি মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে।