শীতল ছিমছাম একটি এলাকা ধানমন্ডি! হাতের নাগালে সবকিছু থাকা এই এলাকায় ঘুরতে কিংবা বসবাস সবকিছুতেই খুঁজে পাবেন স্বস্তি। আবাসিক এলাকা হিসেবে ধানমন্ডির জুড়ি নেই। বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় এই এলাকা। পুরো শহর জুড়েই এই এলাকার খ্যাতি অনেক। ঢাকার অন্যতম একটি প্রাণকেন্দ্র এই ধানমন্ডি। বিনোদনমূলক স্থান থেকে শুরু করে সাহিত্য চর্চা, এখানের সবকিছুই বেশ জনপ্রিয়। আর একটি কথা না বললেই নয় সেটা হচ্ছে খাবার! ঢাকার বিভিন্ন কোণা থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসে মজাদার খাবার খেতে। ফাস্ট ফুড থেকে শুরু করে ট্র্যাডিশনাল সবকিছু বেশ সুলভমূল্যে সহজেই পাওয়া যায়। এছাড়াও, শহরের প্রাণ কেন্দ্র হয়ে থাকা ধানমন্ডিতে থাকার সুবিধা রয়েছে আরও অনেক। একে একে জানা যাবে সেই সব সুবিধাগুলো সম্বন্ধে।
ধানমন্ডিতে থাকার সুবিধা সমূহ
ধানমন্ডিতে একটি সুন্দর দিন কাটাতে চাইলেও এই এলাকা আপনাকে হতাশ করবে না। কি নেই এখানে! নাগরিক জীবনের সকল চাহিদা এখানে মিলে যাবে। এই এলাকাতে থাকার সুবিধাও রয়েছে অনেক। একে একে জানতে পড়তে থাকুন!

ইতিহাসে ধানমন্ডি
১৯৫৬ সালের দিকে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে। এই এলাকাটি শহরের অভিজাত শ্রেণীর জন্য নির্মাণ করা হলেও সময়ের সাথে সবার ঠিকানা হয়ে ওঠে। কয়েক দশক ধরে এটি একটি আধুনিক শহরের সমস্ত উপাদান নিয়ে আর একটি উপশহরে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ধানমন্ডি শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান এবং মেগাসিটির একটি অংশ। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে আমরা দেখতে পারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবাস এই ধানমন্ডিতেই। যেখানে পরবর্তীতে তৈরি করা হয় বঙ্গবন্ধু যাদুঘর। তিনি এই বাড়িতে গুরুত্বপূর্ণ সভা এবং সমাবেশ করতেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাড়ি ধানমন্ডিতে রয়েছে। সুতরাং, নিঃসন্দেহে বলা যায় বাংলাদেশের জন্ম ও উত্থানের ক্ষেত্রে এই এলাকাটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। এছাড়াও, ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ মুঘল ঈদগাহ নামেও পরিচিত। এটি ধানমন্ডি ৬/এ তে সাত মসজিদ রোডে অবস্থিত। এই ঈদগাহটি মোগল সম্রাটের রাজত্বকালে ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। সেই তখন থেকেই ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আশেপাশের এলাকা
ঢাকা শহরের মাঝে চমৎকার অবস্থান ধানমন্ডির। এই এলাকা থেকে শহরের যেকোন এরিয়াতেই পৌঁছানো বেশ সহজ। এই এলাকার উত্তরে আছে মোহাম্মদপুর, শ্যামলী এবং কল্যাণপুর এলাকা, আরও দক্ষিণে গেলে দেখা মিলবে গাবতলীর। মিরপুর, ফার্মগেট, পান্থপথ আছে ধানমন্ডির পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে। আর ঢাকার পুরাতন অংশ যেমন হাজারীবাগ, নওয়াবগঞ্জ, আজিমপুর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পশ্চিম ও দক্ষিণ -পশ্চিমে।

আবাসিক এলাকা ধানমন্ডি
স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাসের জন্য আবাসিক এলাকা হিসেবে ধানমন্ডিতে থাকার সুবিধা বরাবরই রয়েছে। আবাসিক বাণিজ্যিক সবদিক থেকেই এই এলাকা পরিপূর্ণ। গত কয়েক দশকে আবাসিক-বাণিজ্যিক সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে একটি হাইব্রিড জোনে পরিণত হয়েছে। এই এলাকার মানুষের কখনই স্বাচ্ছন্দ্য ও সুবিধার অভাব হয়নি। অভ্যন্তরীণ প্রতিটি রাস্তাতেই অগণিত সংখ্যক বাড়ি ও প্রপার্টি রয়েছে যা একটি আরেকটির চেয়ে ভাল। ধানমন্ডি এলাকার অ্যাপার্টমেন্টগুলি, বিশেষত ধানমন্ডি লেকের আশেপাশের প্রায় প্রতিটি ভবনই নান্দনিক এবং এগুলোর মূল্যমানও বেশ চড়া।

যাতায়াত ব্যবস্থা
ধানমন্ডিতে থাকার সুবিধা হল এই এলাকা থেকে যেকোন গন্তব্য খুব বেশি দূরে নয়। এলাকা চলাচলরত রিকশা দিয়ে শহরের যেকোন স্থানে দ্রুত এবং সহজেই পৌঁছানো যায়। শহরের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত থাকতে প্রচুর পাবলিক বাস পাওয়া যায় যা সাতমসজিদ রোড ও মিরপুর রোড ধরে ধানমন্ডিকে লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট, আগারগাঁও, শ্যামলী, মিরপুর এবং কল্যাণপুরের সাথে সংযুক্ত করে। তদুপরি, শাহবাগ সড়কটি পরোক্ষভাবে গণপরিবহনের মাধ্যমে মালিবাগ, কাকরাইল, মতিঝিল এবং গুলিস্তানের সাথে সংযুক্ত করে ধানমন্ডিকে। এর ফলে সংযোগের একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক তৈরি হয় যা ঢাকার বেশিরভাগ অঞ্চলেই নেই।

শিক্ষা ব্যবস্থা
ঢাকা শহরের মাঝে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমাহার আছে ধানমন্ডিতেই। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চমানের শিক্ষাপ্রদান করতে পারে এদের সবগুলোই। ঢাকার প্রাচীনতম বিদ্যালয়ের একটি গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল ঢাকা, সিটি কলেজ, সানিডেল, স্কলাস্টিকা, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের মত প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার সন্তানকে দিতে পারে সুশিক্ষার খোঁজ। অন্যদিকে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বা ইউল্যাব, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির মত প্রতিষ্ঠানে মেলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। এছাড়াও এখানে রয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ। ধানমন্ডিতে আছে দেশের স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী স্পোর্টিং ক্লাব আবাহনী ক্রীড়া চক্র। ধানমন্ডির আরেকটি বিশেষ দিক হল এখানে ভীনদেশী ভাষা শিক্ষার জন্য গথে-ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ এবং অ্যালিয়াস ফ্রাসেস ডি ঢাকা-এর উপস্থিতি যেখান থেকে জার্মান, ফ্রেঞ্চের মত বিশ্বব্যাপী কথিত ভাষা শেখা সম্ভব। সেই সাথে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিশ্বসংস্কৃতির সাথেও পরিচয় ঘটে ধানমন্ডিবাসীর।

চিকিৎসা সুবিধা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতই ধানমন্ডিতে প্রাপ্ত চিকিৎসা সুবিধাও অসাধারণ। শুধু ঢাকা নয় বরং দেশের নানান প্রান্ত থেকে মানুষজন ধানমন্ডিতে আসে সুচিকিৎসার আশায়। এই এলাকায় ৩০টিরও বেশি ডেন্টাল ক্লিনিক রয়েছে যে কোন ধরণের দন্ত চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাতে। আছে প্রয়োজন মাফিক সাধারণ এবং স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইবনে সিনা হসপিটাল, মেডিনোভা, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হসপিটাল এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং বিখ্যাত চোখের চিকিৎসাকেন্দ্র বাংলাদেশ আই হসপিটালের প্রধান শাখাও এখানেই, ধানমন্ডি ২৭ এ অবস্থিত। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় ক্যান্সার হাসপাতাল, আনোয়ার খান মর্ডান ক্যান্সার হসপিটালও পাওয়া যাবে ধানমন্ডি ক্লাব মাঠের পাশেই।

বিনোদনমূলক স্থান
ধানমন্ডির লেক! সবুজে শ্যামলে ঘেরা একটি লেক। যেখানে মানুষ হাটাহাটি থেকে শুরু করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা সবকিছুই করে থাকে। শহরের জীবনে প্রতিটি দিন কাটে ব্যস্ততায়। সকল বয়সের এবং শ্রেণীপেশার মানুষের দুদন্ড অবসর কাটানোর জন্য ধানমন্ডি লেকের জুড়ি নেই। ছুটির দিনগুলো কাটাতে চলে আসুন ধানমন্ডির এই লেকে। আছে রবীন্দ্র সরোবর, যেখানে খোলা আকাশের নিচে বসে কনসার্ট কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাগম। সীমান্ত সম্ভারে আছে সিনেমা হল “স্টার সিনেপ্লেক্স”। বিনোদনের জায়গার কোন অভাব নেই এখানে।

কেনাকাটা
ধানমন্ডি এলাকাটি এমনই যেখানে কেনাকাটার অপশন অনেক। রাপা প্লাজা থেকে শুরু করে সীমান্ত সম্ভার সবগুলো বেশ জনপ্রিয় ধানমন্ডি বাসিন্দাদের কাছে। এছাড়া আরও আছে, ধানমন্ডি হকার্স, গাঁ ঘেঁষে আছে চাঁদনী চক আর নিউ মার্কেট। এই কেনাকাটার জায়গাগুলো বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেটগুলো তো আছেই। যেখানে সবসময় হাল ফ্যাশনের পোশাকগুলো পাওয়া যায়। এক রাস্তায় আসলে সব আছে। এছাড়া বিশেষ নজরকাড়ে যে আয়োজনগুলো, সেগুলো হল, বিভিন্ন গ্যালারীতে অলনাইন শপের মেলা। যেখানে বিভিন্ন রকমের ডিসকাউন্ট আর অফার থাকে। এইজন্য এই মেলাগুলোতে ভিড় জমে বেশি।

খাবার
নামীদামী সব রেস্তোরা আছে এই এলাকায়। সব রকমের খাবারের জন্য এদিকটা বেশ জনপ্রিয়। বাঙালি খাবার হোক কিংবা ফার্স্ট ফুড সবকিছুই এখানে সেরা। এটি এমন এক এলাকা যেখানে এসে আপনি কখনোই শূন্য হাতে ফিরে যাবেন না। ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড থেকে শুরু করে জিগাতলা অব্দি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য বহুতল ভবন। যে ভবনের একেকটি ফ্লোরে জায়গা করে নিয়েছে মজার খাবারের সব রেস্তোরা।
এই ছিল ধানমন্ডিতে থাকার সুবিধা নিয়ে আমাদের ব্লগ। এছাড়াও ধানমন্ডি এরিয়া সম্বন্ধে আরও জানতে পড়তে পারুন ধানমন্ডি এরিয়া গাইড। আপনি কি এই এলাকার বাসিন্দা? তাহলে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন আমাদের সাথে। অথবা যে কোন মন্তব্য থাকলে জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে!