সময়ের সাথে ঘর সাজানোর ধরনে এসেছে নানারকমের পরিবর্তন। কোথাও মিনিমাল ডেকোর আবার কোথাও এসেছে আসবাবে জাঁকজমকতা ও নতুনত্ব। সব মিলিয়ে পুরানো দিনের হোম ডেকোর এখন নেই বললেই চলে। কিন্তু, ফেলে আসা দিনগুলোতে ঘর এবং ঘরের প্রিয় আসবাবের সঙ্গে আপনার রয়েছে পুরনো বন্ধন। চলুন না, একটু পেছন ফেরে দেখা যাক পুরানো দিনের হোম ডেকোর এ কি কি ছিল? কেমনই বা ছিল সে সময়কার আসবাব। চলুন শুরু করা যাক।
লেসের তৈরি ম্যাট কিংবা টেবিল ক্লথ

একটা সময় ছিল যখন ঘরে ঘরে শোভা পেত লেসের তৈরি নানা ধরনের জিনিসপত্র। ফ্লোর ম্যাট থেকে শুরু করে টেবিল ক্লথ, খাবার ঢাকুনি, সোফার কুশন কাভার ইত্যাদি। কম বেশি প্রায় সবকিছুতেই থাকত লেসের তৈরি বর্ডার। অনেকে শখ করে এই লেস কুশি সুতা দিয়ে নিজ হাতে বুনতেন। তখনকার সময়টা সম্ভবত এমনই ছিল ঘরের ভেতরে থাকা চাই নিজের হাতের স্পর্শ।
ভারী বোর্ড বা সিলিং

হাফ বিল্ডিং কিংবা টিনসেটের বাসায় এই ধরনের সিলিং বেশি দেখা যায়। সময়ের সাথে হাফ বিল্ডিং যেমন বিলুপ্ত হয়েছে তেমন এই ভারী সিলিংগুলোও হারিয়ে গেছে। অনেক বাড়িতে দেখা যেত রঙিন নকশার বাহারি সিলিং। শুধু যে ভারী বোর্ডের সিলিং ব্যবহৃত হতো তা কিন্তু নয়! অনেক ক্ষেত্রে বাসের তৈরি সিলিংও ব্যবহৃত হতো। এখনকার সময়ে বাহারি সিলিং থাকলেও তখন ঘরের সৌন্দর্য বর্ধণের জন্য অনেকে আবার এই সিলিংকে রাঙিয়ে নিতেন নানা রঙে আর নকশায়। সত্যি অদ্ভুত সুন্দর ছিল এই কারুকার্য।
ফ্লোরাল ডেকোর

কাঁচা ফুলের শোভা কখনই অন্য কোনরকমের ফুল বাড়াতে পারে না। আগের সময়ে ঘর সাজানোর জন্য ফুলের চেয়ে উত্তম কোন অনুষঙ্গ ছিল না। শুধু যে জীবন্ত ফুল দিয়েই ঘর সাজানো হতো তা কিন্তু নয়! প্লাস্টিক ফুল দিয়েও ঘরের বিভিন্ন কর্নার সাজানো হতো। ফুলদানি থেকে শুরু করে দেয়ালে ফুল ঝুলিয়ে রাখা কিংবা সিলিং এ ফুলের থোকা ঝুলিয়ে রাখা হতো। শুধু যে জীবন্ত বা প্লাস্টিক ফুল রাখায় সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়। ফুলের প্রিন্টের পর্দা, সোফা, টেবিল ক্লথ, বিছানার চাদর সবকিছুতেই কম বেশি ফুলের ছোঁয়া থাকবেই। সেই সময়ে ফ্লোরাল ডেকোর বেশ জনপ্রিয় ছিল।
কৃত্রিম ফলমূল

কৃত্রিম ফুলের সাথে তাল মিলিয়ে আর একটি ঘর সাজানোর অনুষঙ্গ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল সেটা হল মাটির তৈরি রঙ বেরঙের ফলমূল। কমবেশি সব বাড়িতেই ড্রয়িং রুমের মাঝখানের টেবিলে কিংবা সাইড টেবিলে একটি বড় থালায় সাজানো থাকত এই মাটির তৈরি ফলগুলো। দেখতে এতটাই সত্য মনে হতো যে ছোট বড় অনেকেই ভুলে মুখে পুড়ে নেবার চেষ্টা করতো! বেশ মজার ছিল সেই স্মৃতিগুলো।
কাঠের আসবাবপত্র

এখনকার সময়ের আসবাবপত্র বাছাই করার ক্ষেত্রে রয়েছে প্রচুর অপশন। আপনাকে কাঠের আসবাব বেঁছে নিতে হবে তা জরুরী নয়। বাঁশের তৈরি ফার্নিচার, ষ্টীলের ফার্নিচার, মেটাল ফার্নিচার, প্লাস্টিক ফার্নিচার, প্ল্যাই উড ফার্নিচারের মত রয়েছে হাজারো আপশন। এই সবগুলো ফার্নিচারই বেশ জনপ্রিয় এখন। কিন্তু সেই সময়ে কাঠের আসবাবপত্র ব্যতীত অন্য কোন আসবাব ব্যবহার করা হতো না। এবং সে সময়ে কাঠের রঙ বার্নিশ রঙেই রাখা হতো। এখন যেমন সাদা, কফি কিংবা কালো রঙের কিছু দেখা যেতো না বললেই চলে।
বাল্ব

নব্বই দশকের একটি বেশ জনপ্রিয় একটি বিজ্ঞাপন ছিল, “মাছের রাজা ইলিশ আর বাতির রাজা ফিলিপস”! শুধু যে ফিলিপসের বাল্ব জনপ্রিয় ছিল তা মোটেও না। বাজারে নানা ব্র্যান্ডের বাল্ব জায়গা করে নিয়েছিল। সে সময়ে সম্ভবত এমন ঘর পাওয়া যাবে না যেখানে ১০০ পাওয়ারের একটা বাল্ব আলো ছড়াচ্ছে না। তখন যে সাদা আলোর কোন বাতি ছিল না এমন নয়, টিউবলাইট ছিল কিন্তু এই বাল্বগুলো বেশি ব্যবহৃত হতো। হলুদ আলোয় সমস্ত ঘরের চেহারাই যেন বদলে যেত। অন্যরকম এক পরিবেশ তৈরি হতো। বাহারি বাতির অভাব যদিও নেই এখন কিন্তু সেই সময়ের কথাই ছিল আলাদা।
স্মৃতিকাতর হয়ে উঠেছেন নিশ্চয়ই! ফেলে আসা দিনের এই সব স্মৃতিই তো আমাদের জীবন্ত করে রাখে। সময়ের সাথে আমাদের ঘরে যেমনই আধুনিকতা আসুক না কেন, পুরানো দিনের হোম ডেকোর গুলো ভুলবার নয়। আপনার কোন স্মৃতির কথা মনে পড়েছে এখুনি কমেন্টে জানিয়ে দিন।