Reading Time: 4 minutes

কর্ম ব্যস্ত একটি দিন পার করবার পর ক্লান্ত হয়ে শেষ যে ঠিকানায় আমরা পোঁছাই সেটাই সম্ভবত আমাদের কাছে বাসা বা বাড়ি। দিনের শেষে বাসায় পোঁছে আপনি কেমন থাকতে চান? রিলাক্সড নাকি স্ট্রেসড? নিঃসন্দেহে রিলাক্স থাকতে চান। ঘরটা হওয়া চাই এমন যেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন হয় শান্তির। সেজন্য আপনার চারিদিককে তৈরি করতে হবে ইতিবাচক পরিবেশ। চারিদিকে যখন ইতিবাচকতা বিরাজ করবে সেই শান্তি কিন্তু আপনার ভেতরেও প্রবেশ করবে। সুতরাং, কিভাবে নিজের ঘরে ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলা যায় জেনে নেয়া যাক! এই টিপসগুলো সহজেই আপনার ঘরকে করে তুলবে শান্তির নীড়। 

ঘরের স্পেস যথাযথভাবে ব্যবহার করুন 

বেডরুম
ঘরের যে জায়গাটুকু আগে থেকেই আছে সেটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিন

হুটহাট রেনোভেশন না করিয়ে বরং, ঘরের যে জায়গাটুকু আপনার আগে থেকেই আছে সেটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিন। এই ছোট একটি উপায়ে মূহর্তেই আপনার ঘরের চেহারা বদলে যেতে পারে। ঘরের আসবাবপত্রগুলো একটু এদিক সেদিক সরিয়ে রাখুন, দেখবেন ঘর অনেকটা নতুন মনে হচ্ছে। পুরনো ল্যাম্পটা এই সুযোগে বদলে ফেলুন, নতুন কিছু আনুন। ঘরের মধ্যের এই ছোটখাটো পরিবর্তন আপনাকে অনেকটা ইতিবাচক মনোভাব দিবে। কেননা দিনশেষে এলোমেলো গুমট ঘরে স্বস্তি কেউই খুঁজে পাবে না। অন্যদিকে পরিষ্কার গোছানো ঘর এনে দিবে প্রশান্তি আর আরাম। 

শুধু যে ঘর সাজিয়ে নিলেন এতেই কিন্তু দায়িত্ব শেষ নয়! বরং দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। সেটা হল এই ঘরের ভেতরটা মেইন্টেইন করা। থালা বাসন নিয়ম করে পরিষ্কার করা, কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে তুলে রাখা, ঘর সাজিয়ে রাখা ইত্যাদি। আপনি চাইলেই এই ছোটখাটো কাজ নিজেই সেরে ফেলতে পারেন। আলসেমি করে এই কাজগুলো জমিয়ে রাখা ঠিক নয়। বরং কাজগুলো করে ফেললেই অনেকটা ভালো লাগবে। আপনি চাইলে “এক মিনিট নিয়ম” অনুসরণ করতে পারেন। এক মিনিট নিয়ম কি? এটা ঘরের যে কাজগুলো করতে ঠিক এক মিনিটের কম লাগে কিংবা এক মিনিট লাগে সেগুলো সময়ের সাথে সাথে সেরে ফেলা। এভাবে কিছু দিন মেনে চললে আপনি দেখবেন আপনার ঘরের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে তাও কিনা এত কম সময়ে! এই বুদ্ধিটি বেশ কার্যকরী। 

চিনা বাস্তুশাস্ত্র ফেং শ্যুই বা মিনিমাল ডেকোর ব্যবহার করুন  

চিনা বাস্তুশাস্ত্র ফেং শ্যুই বা মিনিমাল ডেকোর
চিনা বাস্তুশাস্ত্র ফেং শ্যুই বা মিনিমাল ডেকোর

ঘরের পরিবেশ বদলে ফেলার উপায় কম বেশি আমরা সবাই জানি! কিন্তু সেই পরিবেশ ইতিবাচক করাটাও কিন্তু আমাদেরই দায়িত্ব। আগের টিপসটা অনেকটা ঘর গুছিয়ে বা সাজিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু এর সাথে এবার আর একটি কাজ করে দেখতে পারেন। চিনা বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী কিছু ইতিবাচক শক্তি বা পজিটিভ এনার্জি ঘরের ভেতর রাখলেই ঘর অনেকটা শান্তির জায়গা হয়ে উঠবে। সবার জন্য এই শাস্ত্র তেমন ফলপ্রসূ নাও হতে পারে কিন্তু অনেক জন্য এটা বেশ কার্যকরী। এই বাস্তু অনুযায়ী ঘরের ভেতর শান্তি এবং ইতিবাচকতা আসে। এই বাস্তু অনুযায়ী ঘরের ভেতর স্পেস ভাগ করা, ঘরের ভেতর প্রাকৃতিক আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা। এই কয়েকটি বিষয় বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঘরে ফেং শ্যুই হোম ডেকোর ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। 

এই বাস্তু শাস্ত্র যদি আপনার পছন্দ না হয় সেক্ষেত্রে চাইলে আপনি আরও সহজ ভাবে ঘরে ইতিবাচক পরিবেশ ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। ফেং শ্যুই হোম ডেকোরের মূল মন্ত্র হচ্ছে, মিনিমালিজম। আপনি ঘরের ভেতর ডেকোর থেকে শুরু করে আসবাব সবকিছু মিনিমাল রাখলেই ঘর অনেকটা খোলামেলা লাগবে। সুতরাং বাস্তু আপনাকে মানতে হচ্ছে না কিন্তু ঘরের ভেতর মিনিমাল ডেকোর থাকছে। 

পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলুন

ইংরেজি টাইপো
শান্তিময় বাসা সেটাই যেখানে প্রিয়জনদের হাসির শব্দ শোনা যাবে

আমাদের অধিকাংশ সমস্যাই সমাধান হয়ে যায় যদি না আমরা ঠিক ভাবে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলি। পরিবারের সকলের সাথে কাটানো সুন্দর সময়গুলো আপনার মন আর ঘরের পরিবেশ দুটোকেই অনেকটা ইতিবাচক করে তোলে। শান্তিময় বাসা সেটাই যেখানে প্রিয়জনদের হাসির শব্দ শোনা যাবে। যেখানে ভালোবাসা বিরাজ করবে। এমন একটা ঘরই তো বয়ে আনবে আপনার জীবনে ইতিবাচকতা। সুতরাং শুধু ঘর নয় সম্পর্কের ইতিবাচকতাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ছোট বড় সব আনন্দ বেদনা ভাগ করে নেয়ার মধ্যেই সম্পর্কের আসল পরিচয়। একে অপরের পাশে থাকা একে অপরের জন্য কিছু করা সবকিছুই আপনার সম্পর্ক কেবল মজবুতই করবে।

পরিবারের সাথে ঘোরাফেরার প্ল্যান করুন

ডাম্বেল
কাজ এবং পরিবার দুটোকেই সময় দিতে হবে এবং সামঞ্জস্য তৈরি করতে হবে

আপনার বিগত সপ্তাহটা যতই ব্যস্ত কেটে থাকুক না কেন, পরিবারের সাথে সময় কাটানোকে মানা করা যাবে না। যদিও এমন হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। সারা সপ্তাহ কাজের ব্যস্ততায় থাকার পর হয়তো একটি অথবা দুটি ছুটির দিন বাসায় কাটানোর ইচ্ছা হতেই পারে। কিন্তু, এমনটা কিন্তু সব সময় করাটা ঠিক হবে না! কাজ এবং পরিবার দুটোকেই সময় দিতে হবে এবং সামঞ্জস্য তৈরি করতে হবে। তবুও যারা একদমই সময় পান না ছুটির দিনটি বাইরে কাটাবার তাদের জন্য রয়েছে চমৎকার একটি টিপস! সেটা হল, পরিবারকে সময় দিতে রোজ কিংবা কয়েকদিন পর কিছু না কিছু প্ল্যান করুন। হতে পারে খেতে যাওয়া কিংবা সিনেমা দেখা, শপিং করা। যেকোন কিছু যেটা সুবিধা হয় আপনার জন্য। এই ভাবে সময় বের করলে যা হবে, আপনার পুরো পরিবারের ভেতর তৈরি হবে ইতিবাচক মনোভাব যা এই সম্পর্কগুলোকে করবে আরও মজবুত।  

সবুজ ছিটিয়ে রাখুন 

ছোট গাছের টব
ছোট ছোট গাছ ঘরের মধ্যে শান্তি বাড়িয়ে থাকে এবং ঘরকে করে তোলে অন্যরকম

বাংলাদেশ এখন পরিবেশবান্ধব এবং আমরা সবাই কম বেশি আমাদের অফিস ও বাসায় সেই কাজগুলো করে থাকি। পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশের একটি অন্যতম ধাপ হচ্ছে, ঘরের ভেতরে টুকরো টুকরো সবুজ ছিটিয়ে রাখা। ছোট ছোট গাছ ঘরের মধ্যে শান্তি বাড়িয়ে থাকে এবং ঘরকে করে তোলে অন্যরকম। সবুজ রঙটাই এমন একটি রঙ যা আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলবে দ্বিগুণ। ছোট মাটির টব কিংবা প্লাস্টিকের ছোট কোন পাত্রে গাছ রাখতে পারেন আপনি। এই ছোট গাছগুলো খুব বেশি সময় আর শ্রম নিবে না আপনার।

দ্রুত ছুটে চলা জীবনটাকে থামিয়ে ভাবতে হবে নিজের ঘরে কি ইতিবাচকতা রয়েছে? যদি না থেকে থাকে কেবল এই কয়েকটি টিপস কাজে লাগিয়ে ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারেন ইতিবাচকতা। কেমন লেগেছে এই টিপসগুলো জানাতে নিশ্চয়ই ভুলবেন না!

Write A Comment