Reading Time: 5 minutes

একান্ত নিজের জন্য একটু সময় বরাদ্দ করা মুশকিল হলেও কঠিন তো নয়! সকল ঝুট ঝামেলা থেকে নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে নিতে কে না চাইবে? কিন্তু সেই সময় আর সুযোগই বা আছে কজনের হাতে। তাই বলে কি নিজেকে একটু আরাম দেয়া থেকে বিরত থাকা যাবে নাকি। একদমই না। আজকে আমি কথা বলতে চাচ্ছি, এমন একটি উপকরণ সনন্ধে। যা আপনার ব্যক্তিগত কাজে তো আসবেই বরং ঘরের ডেকোরের জন্যও বেশ চমৎকার হবে। সেটা হচ্ছে রিলাক্সিং সিটার ! বাড়িতে থেকে নিজেকে একটু আরাম আর স্বস্তি দিতে পারেন এই রিলাক্সিং সিটারে বসে। সকল ব্যস্ততা থেকে মিনিট পাঁচেক ছুটি নিয়েই আপনি একটু আরাম করতে পারছেন। একই সাথে ঘরের ডেকোরে যোগ হচ্ছে আভিজাত্য। চলুন তাহলে জানি রিলাক্সিং সিটার সম্বন্ধে। 

কেন প্রয়োজন 

সিটার
কিছুটা হলেও আপনি আরাম খুঁজে পাবেন

আমাদের ঘরে রয়েছে কিছু বেসিক আসবাবপত্র। ডাইনিং টেবিলের চেয়ার, ড্রয়িং রুমের সোফা থেকে শুরু পড়ার টেবিলের চেয়ার। সবকিছুই একটা নির্দিষ্ট পরিমাপে তৈরি করতে হয়। যাতে সবার ব্যবহার করে সুবিধা হয় কিন্তু, আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা একটা দীর্ঘ সময় অফিসে কাজ করে থাকেন।  একটানা দীর্ঘ সময় ভুল দেহভঙ্গির কারণে ঘাড় বা পিঠে ব্যথা হতে পারে। কিংবা আপনার বসার সেই চেয়ার অ্যাডজাস্টেবল নাও হতে পারে সেক্ষেত্রে নিজের ঘরে যদি একটা রিলাক্সিং চেয়ার থাকে এতে কিছুটা হলেও আপনি আরাম খুঁজে পাবেন। আপনার পছন্দমত এই রিলাক্সিং সিটারগুলো সেট করে নিতে পারছেন। অনেকেই আছেন যারা বিছানায় বসতে তেমন একটা পছন্দ করেন না। আবার ডাইনিং টেবিল বা সোফায় বসেও তেমন আরাম খুঁজে পান না তাদের জন্য এই রিলাক্সিং সিটার একটা আশীর্বাদ। এছাড়া সোফা বা ডাইনিং টেবিল আপনি চাইলেই বদলে ফেলতে পারছেন না। এক্ষেত্রে আপনি বেছে নিতে পারেন যেকোন ধরণের রিলাক্সিং সিটার। এই সিটারগুলো বিভিন্ন ধরণের ম্যাটারিয়ালের হয়ে থাকে তবে যা দিয়েই তৈরি হোক, চেয়ার ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য আরামে বসে থাকা বা কাজ করা। আপনি যদি আরামে বসে কাজ করতে না পারেন তাহলে কাজ তো খারাপ হবেই সাথেসাথে কাজে মনোযোগ আসবে না।

কত ধরণের সিটার রয়েছে ও এগুলোর ব্যবহার 

আধুনিক সময়ে সবাই এমন কিছু কিনতে চান যার ব্যবহার থাকবে একের অধিক। এই রিলাক্সিং সিটারগুলোও কিন্তু এমনই। ব্যবহারের পাশাপাশি ঘরের ডেকরের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। নিদিষ্ট করে এই সিটারগুলোর কোন ধরণ না থাকলেও। বহু নকশার আর আকৃতির রিলাক্সিং সিটার সেগুলো কী কী এবং এর ব্যবহার সম্বন্ধে চলুন জানা যাক। 

লাউঞ্জ চেয়ার 

লাউঞ্জ চেয়ার
লাউঞ্জ চেয়ার

লাউঞ্জ চেয়ারগুলোতে কোন হাতল থাকে না। চেয়ারের সিটটা সামনের দিকে আগানো। চেয়ারের ব্যাক সাইডটা বেশ হেলানো দেখে আরাম করে আধোশোয়া হওয়া যায়। এই চেয়ারগুলোতে একধরণের কার্ভ থাকে যা আপনার শরীরকে ঢেউ আকৃতি দেবে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করবে। আপনার পা এই চেয়ারগুলোতে অনায়াসে এটে যাবে। বেশ কিছু চেয়ারে ব্যাক পার্টটা অ্যাডজাস্ট করার সুবিধাও থাকে। সুতরাং আপনি কতটুকু হেলে থাকবেন সেটা সম্পূর্ণই আপনার সিদ্ধান্ত। এই চেয়ারগুলো অফিস কিংবা বাসায় দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

চেইজ লাউঞ্জ 

এটা অনেকটা লাউঞ্জ চেয়ারের মত হলেও, অনেকটা ডিভানের মত আকৃতির। কিন্তু এটার ব্যাক পার্ট অ্যাডজাস্টেবল না। ফিক্স থাকে। এবং এক পাশের হাতল বেশ উঁচু এবং কার্ভ আকারে হয়ে থাকে।এতে করে আপনি কোনাচে করেও বসতে পারছেন। এবং চেয়ারের এক পাশে সাপোর্ট পাচ্ছেন। এই চেয়ারগুলোতে গদি থাকছে নরম। অফিস কিংবা বাসা সব ক্ষেত্রেই ঘরের শোভা বাড়িয়ে যায় এই চেয়ারগুলো। 

ক্লাব চেয়ার

লাউঞ্জ চেয়ার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই চেয়ারটি তৈরি করা হলেও। এর পেছন দিকের ব্যাক পার্ট বেশ ছোট উচ্চতায় এবং গদি থাকে বেশ নরম এবং গভীর। এই ধরণের চেয়ারগুলো ক্লাব এবং বিভিন্ন দোকান বা শোরুমে দেখা যায়। বসার জন্য বেশ আরামদায়ক। 

আর্ম চেয়ার

আর্ম চেয়ার
আর্ম চেয়ার

দুই হাতল সহ প্যাডযুক্ত এই চেয়ারটা সাধারণ চেয়ারের মতই নকশায় কিন্তু বেশ আলাদা আরামের দিকে থেকে। পুরো চেয়ারে গদি বা ফোম থাকার ফলে এটা বসতে অনেক আরাম খুঁজে পাবেন। এই চেয়ারগুলোতে হাতলে ফোকাসটা বেশি দেওয়া হয়ে থাকে, হাতলটা এতো সুন্দর করে ফোম বা গদি দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে যে ঘণ্টার পর ঘন্টা আরাম করে বসে থাকতে পারছেন। এগুলো বাসা বাড়িতেই বা রেস্টুরেন্টে বেশি দেখা যায়। 

পুলসাইড চেয়ার

বারান্দা বা ছাদ কিংবা সুইমিং পুলের পাশে এই চেয়ার গুলো বেশ সুন্দর মানিয়ে যায়। এটা অনেকটা নকশায় লাউঞ্জ চেয়ারের মত হলেও ম্যাটেরিয়ালের দিক থেকে এটা হিট এবং ওয়াটারপ্রুফ হওয়াতে খোলা আকাশের নিচে রাখা যায় অনায়াসে। 

বিন ব্যাগ 

বাংলাদেশ বেশ জনপ্রিয় এই বিন ব্যাগ। ঘরের যেকোন জায়গায় এটি রাখা যায় এবং পোর্টেবল বলে সহজেই এখানে সেখানে নেওয়া যায়। বসার ক্ষেত্রেও বেশ আরামদায়ক। আপনি এই বিন ব্যাগ চেয়ারে বসলে অর্ধেক ডুবেই যাবেন এর বিনের ভেতর। কখনো বসে বা কখনো আধশোয়া বেশ আরামদায়ক এটি। সব বয়সী মানুষের জন্য এই বিন ব্যাগ বেশ উপযোগী। ঘরের ভেতর রিলাক্সিং কর্নার তৈরী করতে এই বিন ব্যাগের জুড়ি নেই। 

রকিং চেয়ার 

সেই নব্বই দশক থেকে, আমরা দেখেছি নানু বা দাদুর সেই দোল খাওয়ানো চেয়ার কে। কখনো বসেছি আবার কখন ধপাস খেয়ে পড়েছি। এই চেয়ারই আজকের রকিং চেয়ার। সময়ের সাথে হয়তো ম্যাটেরিয়াল বা নকশায় পরিবর্তন এসেছে কিন্তু ব্যবহারটা আজও একইরকম। কাঠের আসবাবের ব্যবহার এখনো কমেনি বরং আরও নতুন আঙ্গিকে বেড়েই চলেছে। আসছে নানা নকশা নানা ধরণ। কিন্তু জনপ্রিয়তা সেই একই। 

কোথায় রাখবেন এবং ডেকোরে এর প্রভার

সিটার
যেকোন জায়গায় আপনি এই সিটারগুলো রাখতে পারেন

ফ্যাশনেবল সব হালকা ম্যাটারিয়ালের আসবাব, যেগুলো রাখতে ঘরেও কম জায়গা লাগে। মানুষ আজকাল এধরণের আসবাবের দিকেই ঝোঁকে বেশি। কিন্তু সেই পুরনো আমলের অ্যান্টিক জিনিসের প্রতি অনেকেই একটা আলাদা টান অনুভব করেন। তবে আজকাল ফ্ল্যাটবাড়ি হওয়ায়, জায়গা কম, তাই সেসব ভারী ডিজাইনের আসবাব আর কেউ ঘরে ঢোকাতে চান না। তাই এমনও দেখা গেছে ড্রয়িং রুমে সোফার বদলে এই রিলাক্সিং সিটারগুলো ব্যবহার করছে। সুতরাং, ঘরের ডেকোরের সাথে মিলিয়ে বেছে নিতে পারেন যেকোন সিটার, ড্রয়িং রুম থেকে শুরু করে নিজের বেডরুম কিংবা বারান্দা যেকোন জায়গায় আপনি এই সিটারগুলো রাখতে পারেন। আপনার ঘরের যে জায়গাটায় আপনি বেশি সময় কাটান সেখানে এটা রাখতে পারেন। এই সিটার গুলো বরাবরই ঘরের ভেতর একটা আভিজাত্য বয়ে আনে।  

দাম ও কোথায় পাবেন 

সিটার
অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও আপনি এগুলো কিনতে পারবেন

অন্দর সাঁজের অনেকটাই নির্ভর করে আপনার ফার্নিচার গুলো দেখতে কেমন তার ওপর! এখন, গতানুগতিক নকশার থেকে ফ্যাশনেবল ফার্নিচার জনপ্রিয় বেশি। কোথায় পাবো এমন ফ্যাশনেবল রিলাক্সিং সিটার? টপ ব্র্যান্ডেড শপগুলোতে গেলে তো অবশ্যই পেয়ে যাবেন এছাড়াও দেখতে পারেন, গুলশান ডিসিসি মার্কেট, রোকেয়া সরণী, শেওড়া পাড়া, কাঁটাবন, পান্থপথ ও টাউনহল মার্কেটে। এছাড়াও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও আপনি এগুলো কিনতে পারবেন। অনেক পেইজ এখন এইসব প্রোডাক্ট বাইরে থেকে আমদানি করছে কিন্তু তার আগে আপনাকে প্রি অর্ডার করতে হবে তবেই এগুলো হাতে পাবেন। এক্ষেত্রে দামের ব্যাপারটাও বেশি হবে।  

দাম – বিনব্যাগগুলোর দাম ১১,০০০ টাকা থেকে শুরু। লাউঞ্জ চেয়ারগুলোর দাম শুরু হবে ১৮,০০০ টাকা থেকে। ক্লাব চেয়ার বা আর্ম চেয়ারগুলো পাবেন ১০,০০০ টাকা থেকে। আর রকিং চেয়ার আপনি পাচ্ছেন ৮,০০০ টাকা থেকে শুরু করে নানা দামে। যদিও পছন্দ, ম্যাটেরিয়াল এবং ব্র্যান্ড হিসেবে মূল্য উঠা নামা করতে পারে।

পরিশেষে এটাই বলতে চাই আসবাবের যত্ন নিতে ভুলবেন না। এই আসবাবগুলো ক্রয় করতে যেমন একটা মোটা অংক ব্যয় হয় তেমনি এগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে জরুরী ভূমিকাও রাখে তাই যত্ন নিন নিয়মিত। এমন চমৎকার সব ব্লগ পড়তে চোখ রাখুন বিপ্রপার্টির ব্লগে।

Write A Comment