Reading Time: 3 minutes

পুরনোকে নতুন অধিগ্রহণ করবে এটাই তো স্বাভাবিক কিন্তু এত চমৎকারভাবে তা একটু বিরল। ঢাকা ডাক অধিদপতর নিয়ে কথা হচ্ছে।  ঢাকা জিপিও প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ভবনটির সম্প্রসারণ সম্ভব ছিল না। ফলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় দাফতরিক কর্মপরিবেশ ও গতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল। এ অবস্থায় ডাক অধিদফতরের সদর দফতর হিসেবে একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ও নান্দনিক ডাক ভবন স্থাপন করা ছিল অত্যন্ত জরুরি। সেই থেকেই ডাক বাক্সের আদলে নির্মিত হয় ডাক ভবন। কেন ডাক বাক্সের আদলে এই ভবটি নির্মাণ করা হয় এই সব জানা অজানা তথ্য নিয়েই আজকের আর্টিকেল। 

ডাক বাক্সে ডাক ভবন যা যা রয়েছে 

Features of Daak Bhabon
দর্শনার্থীদের ভিড় যেন এখানে লেগেই থাকে

এই ভবনটি কোথায় এমন প্রশ্ন মনে জাগলে, জেনে রাখুন আগারগাঁও ও শেরে-ই-বাংলা নগরের হাসপাতাল রোড হয়ে শেরে বাংলা নগরের প্রশাসনিক এলাকায় হাঁটতে হাঁটতে হুট করে চখে পড়ে যেতে পারে লাল টুকটুকে এই ভবনটি। একটু থমকে গেলেও অস্বাভাবিক নয়। এমন স্থাপনা দেশে হরহামেশা দেখা মিলে না। নতুন নির্মিত এই ভবনটি এখন আলোচনার বিষয়। দর্শনার্থীদের ভিড় যেন এখানে লেগেই থাকে। কেউ কেউ ঘুরে আসছেন ভিতর থেকে। 

ঢুকতেই চোখে পড়বে নিচতলায় বিশাল বিশাল ডাকটিকিট দেয়ালে খোদাই করা। রয়েছে ডাক টিকিটের সমাহার। প্রাচীন সময় থেকে শুরু করে আধুনিক সময় সবগুলো ডাকটিকিটের সমহার রয়েছে এখানে। এক সারিতে যেন গোটা বাংলাদেশ লুকিয়ে আছে। যাদের ডাক টিকিটের প্রতি অন্যরকম তৃষ্ণা রয়েছে তাদের এখানে যাওয়া বাধ্যতামূলক। শুধু ডাকটিকেট নয় বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু ঐতিহাসিক ঘটনাও এখানে চমৎকার ভাবে পোট্রে করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, সাত বীরশ্রেষ্ঠ—জাতীয় বীরদের কে নেই সেখানে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও এখানে বেশ সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে। অল্প কথায় আমাদের বীরত্ব আর বীরসন্তানদের কীর্তিগাথা বর্ণনা করা হয়েছে যেন। কেন ডাক বাক্সের মত করে স্থাপনা নির্মাণ করা হল এমন ভাবনা আসতেই পারে! এই ধারণাটা ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রের। তিনি চেয়েছেল এমন এক স্থাপনা যা দেখে মানুষ মূহূর্তেই বলে দিতে পারে আসলে এটা কিসের কার্যালয়। এমন ধারণা বা স্বপ্ন থেকেই এই ভবন নির্মাণের অনুপ্রেরণা। উঁচু ভবন আমাদের বর্তমান নগর জীবনের অতি পরিচিত বিষয়। মূলত সে ধারণা মাথায় রেখেই স্থাপত্য নকশা তৈরি হয়েছে। আর এই স্থাপত্য নকশা করেছেন স্থপতি কৌশিক বিশ্বাস। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে ডাকের যে একটা সম্পর্ক তা ফুটিয়ে তুলতেই স্থপতি তার সর্বত্ত দিয়ে নকশা করেছেন এবং তিনি শতভাগ সফল হয়েছেনও। 

Entrance of Daak Bhabhon
নতুন নির্মিত এই ভবনটি এখন আলোচনার বিষয়

ডাক বাক্সের মত দেখা গেলেও ১৪ তলা বিশিষ্ট এই ভবনে কি নেই। পৌনে এক একর জায়গার ওপর ৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ডাক বিভাগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভবনটি তৈরি করা হয়েছে। নবনির্মিত ডাক ভবনটিতে সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আধুনিক পোস্টাল মিউজিয়াম, সুপরিসর অডিটরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, মেডিক্যাল সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা এবং সার্বক্ষণিক ওয়াইফাইসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধা রাখা হয়েছে।

চমৎকার ভবন দেখতে এসে

ভবন নির্মাণের পর থেকেই বেশ চর্চায় এসেছে। ঢাকায় আকাশচুম্বী ভবন আরও অনেক রয়েছে কিন্তু ডাক ভবনের জনপ্রিয়তা যেন বেশি। দেখতে এসেছে হাজারো মানুষ। পথ দিয়ে যারা আসা যাওয়া করেন তাদের কাছেও এটা একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ভবনের সামনে রয়েছে সুপ্রস্থত রাস্তা। রাস্তার ধারে বসেছে নানারকম স্ট্রিট ফুড। ডাক বাক্সের মত ডাক ভবন দেখতে আসা মানুষ এখানেই বসে গল্প আড্ডায় মেতে ওঠে। আর মজাদার খাবার উপভোগ করেন। খাবারদাবার সবসময়ই আমাদের একমাত্র আশ্রয় যেকোন পরিস্থিতিতে। সে খাবার মজার কিনা তা ভাবি আমরা পরে কিন্তু আগে পেটে পুড়ে নেই। এখানের স্ট্রিট ফুডও বেশ মজার। ছুটির দিনে কিংবা অবসরে প্রিয়জন নিয়ে খাওয়ার মত অসংখ্য রেস্তোঁরা এখানে রয়েছে। কিন্তু এমন চমৎকার স্থাপনা দেখার পাশাপাশি মজাদার খাবারের জন্য এই এলাকায় আসা চাই-ই চাই। প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু সময় কাটানোর জন্য এই এলাকা সেরা। ডাক বাক্সের মত ডাক ভবন এখন অনেকের কাছেই পছন্দের একটি জায়গা। শহরের ভেতরে খোলামেলা জায়গায় এমন সুন্দর করে নির্মিত ভবন যেন সত্যিই বিরল। সময় করে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এই ডাক ভবন থেকে। 

আমি জানি আপনারা কি ভাবছেন? না আমরা কোন তথ্য মিস করিনি। শেরে বাংলাতে এত দারুণ একটি স্থাপনা রয়েছে তার সম্বন্ধে কোন কিছু বাদ দেয়া যেন অন্যায়। সময় করে ঘুরে আসুন এই চমৎকার ডাক বাক্সের আদলে নির্মিত ‘ডাক ভবন থেকে। আর আপনার চমৎকার অভিজ্ঞতা জানিয়ে দিতে পারেন কমেন্টে।

Write A Comment